গৌরনদী প্রতিনিধি ॥ বহুকাল থেকে আমরা কাবুলিওয়ালা শব্দটির সাথে পরিচিত। একটা সময়ে এদেশের অভাবি মানুষ আফগানিস্তান থেকে আসা কাবুলিওয়ালাদের কাছ থেকে ঋণ নিতো। ঋনগ্রস্ত মানুষ ঋনের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে কাবুলিওয়ালারা তাদের নানান ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করতো। এনিয়ে কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর কাবুলিওয়ালা নামে একটি গল্পও লিখেছেন। আফগানিস্তান কিংবা কবি গুরুর গল্পের কাবুলিওয়ালা নয় এবার প্রকৃতভাবেই খোঁজ মিলেছে এ যুগের এক কাবুলিওয়ালার। মাত্র এক হাজার দশ টাকা পরিশোধ না করায় নুরুন্নাহার নামের এক নারীকে মামলায় জড়িয়ে জেল খাটিয়ে তৎকালীন যুগের কাবুলিওয়ালাকেও হার মানিয়েছে এক মাল্টিপারপাস সোসাইটি। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের। ওই ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া গ্রামের সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ২০১৯ সালে বাটাজোর বন্দরের পপুলার মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি থেকে ৩০ হাজার টাকার ঋন নেই। সোসাইটির নিয়মানুযায়ী প্রতি সপ্তাহে নয়শ’ টাকা হারে কিস্তি এবং সঞ্চয়ের টাকা পরিশোধ করি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কিস্তি এবং সঞ্চয়ের টাকা জমা দেই। এতে মাল্টিপারপাসের অনুকূলে ২০ হাজার একশ’ টাকা পরিশোধ করা হয় এবং সঞ্চয় বাবদ আট হাজার ৯০ টাকা জমা দেই। এরইমধ্যে দেশে করোনা ভাইরাস শুরু হলে ওই মাল্টিপারপাসের অফিস বন্ধ থাকায় কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে সোসাইটি তার (নুরুন্নাহার) কাছে এক হাজার দশ টাকা পাওনা থাকে। তিনি (নুরুন্নাহার) আরও বলেন, গত দুইদিন পূর্বে গৌরনদী মডেল থানার এসআই রফিক বাসুদেবপাড়া কালীবাড়ি বাজারে গিয়ে তাকে (নুরুন্নাহার) খোঁজাখুজি করেন। বুধবার (১৯ মে) বেলা এগারটার দিকে তিনি (নুরুন্নাহার) সরলমনে ওই এসআই’র সাথে দেখা করতে থানায় যান। এসময় তিনি জানতে পারেন পপুলার মাল্টিপারপাস সোসাইটি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। ভুক্তভোগি নুরুন্নাহার বেগম অভিযোগ করে বলেন, ওই মাল্টিপারপাসের ঋন পরিশোধের জন্য তাকে কোন প্রকার সুযোগ না দিয়েই সবার অজান্তে মামলা করেছে। ফলে আট মাসের দুগ্ধজাত সন্তান রেখে তাকে দুইদিন জেলখাটতে হয়েছে। তিনি (নুরুন্নাহার) ওই মাল্টিপারপাস কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলপূর্বক কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবী জানান। গৌরনদী মডেল থানার এসআই রফিক জানান, ২০২০ সালে পিরোজপুর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। যার নম্বর- সিআর- ৪৫৩/২০। তিনি আরও জানান, মামলার আসামীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকায় তাকে আদালতে প্রেরন করা হয়। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ভুক্তভোগি নারীর পিতা বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন। করোনাকালীন সময়ে ওই মাল্টিপারপাস সোসাইটির সহনশীল হওয়া উচিত ছিলো। এবিষয়ে জানতে পপুলার মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বাটাজোর অফিসে গিয়ে অফিসটি বন্ধ পাওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply